নিজস্ব প্রতিবেদন : পূর্ব লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত-চীন সীমান্ত সংঘাতের পর ভারত চীনকে কড়া বার্তা দেয়, সাথে সতর্ক হতেও বলে। কিন্তু চীন বারবার বার্তা পাওয়ার পরও এতটুকুও নমনীয় হয়নি। ফলস্বরূপ চীনকে চূড়ান্ত বার্তা দিতে কেন্দ্র সরকার একের পর এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়ে চলেছে।
বেজিংকে কার্যত কোণঠাসা করতে যুদ্ধংদেহী মেজাজে আবির্ভূত হয়েছে ভারত। এই মুহূর্তে ভারতের হাতে অস্ত্র ত্রিশূল কৌশল। অর্থাৎ তিনটি দিক থেকে ভারত চীনকে কার্যত সাঁড়াশির মত চেপে ধরা।
শুরুটা হয়েছিলো প্রথমে চীনের পণ্য ও পরিষেবা নিষিদ্ধ করা নিয়ে। BSNL এর মতো টেলিকম সংস্থাগুলিকে কেন্দ্র সরকার সরাসরি বার্তা দেয় তারা যেন চীনের পণ্য ব্যবহার না করে। কয়েকদিন আগে চীনকে রীতিমতো কোণঠাসা করতে চীনের ৫৯টি চিনা অ্যাপ ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে চীনের পণ্য ও পরিষেবাকে নিষিদ্ধ করতে উঠে পড়ে লাগে কেন্দ্রের নেতৃত্বাধীন সরকার।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ হিসেবে চীনকে আরও অর্থনৈতিক চাপে ফেলতে বরাত বাতিলের পথে হাঁটে কেন্দ্র।রেলমন্ত্রক একটি ক্ষেত্রে চীনা সংস্থার বরাত বাতিল করে। এমনকি গঙ্গার ওপারে ব্রীজ তৈরীর প্রকল্পেও চীনা সংস্থার বরাত বাতিল করা হয়।
সাম্রাজ্যলোলুপ বেজিংকে শায়েস্তা করতে তৃতীয় পদক্ষেপ হিসেবে চীনা পণ্য আমদানিতে রাশ টানে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রতিবছর প্রায় ১৪ শতাংশ চীনা পণ্য ভারতে আসে। ভারতের সাথে বাণিজ্যের গাঁটছাড়া বেঁধে বিপুল মুনাফা লাভ করে চীন। এই সকল ক্ষেত্রগুলিতেও কড়াকড়ি করলো মোদী সরকার। এই তিনটি শূলেই আপাতত বিদ্ধ বেজিং।
বুধবার বিজেপি নেতা অমিত মালব্য ট্যুইটে স্পষ্ট বলেই দেন, যে সহ্যের সীমা পার করলে এরপর আরও ফল ভোগ করতে হবে বেজিংকে। চীনকে ভাতে মারার মতো একের পর এক কৌশলী পদক্ষেপ নেওয়ার পরও বিজেপি নেতা উল্লেখ করেন এটা নেহাতই শুরু। পুরো সিনেমা এখনো বাকি।এভাবেই বেজিংকে আবারও কড়া বার্তা দেওয়া হলো দেশের অভ্যন্তর থেকে। ঠিক কী বলেছেন বিজেপি নেতা অমিত মালব্য? ট্যুইটে তিনি লেখেন, “চিনা সোশ্যাল মিডিয়া উইবো ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। স্পষ্টই বার্তা দেওয়া হলো লাল দাগ (ধৈর্যের সীমা) পেরোলে তার ফলও ভুগতে হবে। সীমান্তে যে ঘটনা শুরু হয়েছিল তা ইতিমধ্যেই বহু দিকে নিজের ডালপালা বিস্তার করেছে। তবে এটা নেহাতই শুরু…”।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়করি জানিয়েছেন, ভারতের কোন সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে দরপত্র দিতে পারবেনা চিনা সংস্থা। দেশীয় কোন সংস্থার সাথে মিলিত হয়েও তারা সড়ক নির্মাণের প্রকল্পে দরপত্র দিতে পারবে না। নতুন কোনো প্রকল্পে আর চিনা কোন সংস্থাকেই শামিল করা হবে না। এমনকি পুরনো প্রকল্পগুলিও এই মুহূর্তে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই সকল ক্ষেত্রগুলিতেও দরপত্র বাতিল করা হবে।
বিদেশী অ্যাপের উপর নির্ভর না হয়ে দেশীয় অ্যাপগুলিকে সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রক। তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ জানিয়েছেন, বিদেশি অ্যাপের উপর নির্ভরতা বন্ধ হওয়াটা ভীষণ জরুরী। ওই সকল অ্যাপ বাজার থেকে সরে গেলে দেশের স্টার্ট অ্যাপগুলিও এই বাজারে জাঁকিয়ে বসতে পারবে। এক অর্থে এই ফাঁকা বাজার দেশীয় সংস্থাগুলির জন্য সুবিধাজনকই হলো। এই ফাঁকা বাজার তাদের জন্য নতুন সম্ভাবনার পথ উন্মোচিত করেছে।