অনলাইন ব্যবসায় নতুন আইন আনলো কেন্দ্র, সুবিধা বাড়বে গ্রাহকদের

নিজস্ব প্রতিবেদন : শুক্রবার, কনজিউমার প্রোটেকশন আইনের আওতায় কনজিউমার প্রোটেকশন বিধি ২০২০ কার্যকর করার কথা ঘোষণা করল কেন্দ্র সরকার। কেন্দ্রীয় ক্রেতা বিষয়ক মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের অনলাইন ক্ষেত্রে বিক্রি হওয়া সব পণ্যই এর আওতায় আসবে। অনলাইন ব্যবসায় বৈষম্যমূলক ও অনৈতিক পন্থা নিলেই ই-কমার্স সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে এই নতুন আইনে ব্যবস্থা নিতে পারবে কেন্দ্র। নতুন আইনে কোন সংস্থা অতিরিক্ত বা অবাঞ্ছিত লাভের আশায় নির্দিষ্ট পণ্যের বিক্রির ক্ষেত্রে দামে বিরাট ছাড় বা কোন কৌশল করতে পারবে না। নিজেদের ইচ্ছা অনুযায়ী ক্রেতাদের মধ্যে বৈষম্যমূলক কোন ভাগাভাগি করতে পারবে না ই-কমার্স বিক্রেতা সংস্থাগুলি।

এই নতুন ই-কমার্স আইনে প্রত্যেক সংস্থাকে নিশ্চিত করতে হবে যে গ্ৰাহকদের সব অভিযোগকেই ৪৮ ঘন্টার মধ্যে স্বীকার করতে হবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির গ্ৰিভান্স অফিসারকে এবং ১ মাসের মধ্যে ক্রেতাদের অভিযোগগুলির সমাধান করতে হবে।

সেইসঙ্গে এও জানানো হয়েছে, পণ্য বা পরিষেবা উভয় ক্ষেত্রেই বাতিল করা হলে, কোনভাবেই ক্যানসেলশন চার্জ বা বাতিল চার্জ চাপাতে পারবে না ই-কমার্স প্লাটফর্ম কর্তৃপক্ষ। যদি না নিজেরাও সমপরিমাণ অর্থ খরচ বহন করেন।

এছাড়াও ই-কমার্স সংস্থাগুলিকে জানাতে হবে তাদের তৈরি পণ্য কোথায় তৈরি হয়েছে, যদি তা বিদেশে হয়, কোন দেশে তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন দেশের পার্টস নিয়ে ভারতে তা গড়া হয়েছে কিনা সেটাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে বিক্রেতা সংস্থাগুলিকে। যাতে এই পণ্যগুলি কেনার আগে গ্ৰাহক সব তথ্য পেতে পারেন।

এছাড়াও দেশীয় পণ্যের ক্ষেত্রে ই-কমার্স সংস্থাগুলিকে তাদের ঠিকানা, ফোন নম্বর গ্ৰাহককে জানাতে হবে এই নতুন আইনে। লাইভ স্ট্রেমিং পরিষেবা দেওয়া সংস্থাগুলি যারা অনলাইনে আর্থিক লেনদেন গ্ৰহণ করে গ্ৰাহকদের থেকে সেইসব পেমেন্ট গেটওয়েগুলিকে এই নতুন আইন বাধ্যতামূলকভাবে মেনে চলতে হবে।

এর সঙ্গে ই-কমার্স সংস্থাগুলিকে পণ্য রিটার্নের ক্ষেত্রে, রিফান্ড বদল, গ্যারান্টি এবং ওয়ারেন্টি, ডেলিভারি এবং শিপমেন্ট, মোড অফ পেমেন্ট, গ্ৰিভান্স রিড্রেসাল সহ যাবতীয় তথ্য গ্ৰাহকে জানাতে হবে।

কাস্টমার কেয়ারের নম্বর রাখতে হবে সব পণ্যে। কোন বিক্রেতা যদি ক্রেতা সেজে নিজের পণ্যের গুণমানের প্রচার করে প্ররোচিত করার চেষ্টা করে তাহলে তা আইনযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে নতুন আইনে।

পাশাপাশি কোন পণ্য ফেরত দিতে না চাওয়া, পরিষেবা চালু না রাখা ও টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্ৰাহককে বঞ্চিত করা হলে তা অপরাধ বলে গন্য হবে।

বিক্রেতাদের দামের ক্ষেত্রে, মূল দাম, ডেলিভারি চার্জ, পোস্টেজ এবং হ্যান্ডেলিং চার্জ, কনভেয়ান্স চার্জ নির্দিষ্ট ভাবে জানতে হবে। অনলাইন ভারতে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে ই-কমার্স সংস্থার প্লাটফর্মের সোর্স কোড ও অ্যালগরিদমের ওপর নজরদারির ক্ষেত্রে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের অধিকার থাকবে এই আইনে। এই ই-কমার্স সংস্থাগুলি তাদের ওয়েবসাইটে যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যালগরিদম ব্যবহার করে থাকে সেগুলি আইনের বাইরে কোন তথ্য জোগাড় করছে কিনা তা কড়া ভাবে নজরদারি চালাবে এবার কেন্দ্র।

এই আইন কাগজে মুদ্রার জগৎ থেকে প্লাস্টিক মুদ্রার জগতে নিয়ে যাবে ভারতের বাজার ব্যবস্থাকে। যা এতদিন ধীরগতিতে পরিবর্তিত হচ্ছিল, করোনা মহামারী তাকে আরও গতিশীল করে তুলবে বলেই বিশেষজ্ঞদের মত। প্রাথমিক অবস্থায় দেশের বৃহৎ সংখ্যক গ্ৰাহক অসুবিধার সম্মুখীন হলেও ভবিষ্যতের কেনাকাটার বাজার ই-কমার্স পথেই সহজ হয়ে উঠবে। আর এই আইন আনার ফলে গ্রাহকরা আগের তুলনায় অনেক বেশি সুবিধা পেতে পারবেন।