ধিক্কার দিবসে জমি নিয়ে কড়া সিদ্ধান্ত লোবা কৃষিজমি রক্ষা কমিটির

লাল্টু : ২০১২ সালের ৬ই নভেম্বর লোবা এলাকায় খোলামুখ কয়লা খনি প্রকল্প নিয়ে প্রশাসনের সাথে লোবা কৃষি জমি রক্ষা কমিটির দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায়। প্রশাসনের তরফ থেকে গ্রামবাসীদের দ্বারা আটকে রাখা একটি মাটি খননকারী মেশিন আনতে গেলে এই দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। দ্বন্দ্ব এতটাই চরমে পৌঁছায় যে পুলিশের তরফ থেকে গুলিও চালানো হয় বলে অভিযোগ। পাশাপাশি গ্রামবাসীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে আক্রমন করে। সেই ঘটনায় ৩ জন গ্রামবাসী আহত হন, পুলিশেরও কয়েকজন কর্মী ঘটনায় আহত হন। এরপর থেকেই প্রতি বছর এই দিনটিকে ধিক্কার দিবস হিসেবে পালন করে আসছে লোবা কৃষি জমি রক্ষা কমিটি।

দিন কয়েক আগে সিউড়ির প্রশাসন ভবনে লোবার জমিহারাদের পুনর্বাসনের প্যাকেজের প্রস্তাবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সেই প্রস্তাবে স্বাভাবিকভাবেই ‘না’ জানিয়ে দিয়েছেন লোবাবাসীরা। পাশাপাশি অন্যান্য শর্তপূরনের ক্ষেত্রেও ডিভিসি রেখে দিয়েছে নানান ধোঁয়াশা। এমনই অভিযোগ তুলে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন লোবার কয়লা শিল্পের জন্য জমি দেওয়া অসংখ্য মানুষ। যার পরেই টালবাহানা শুরু হয় জয়দেব-খাগড়া খোলামুখ কয়লা খনি প্রকল্পের পুনর্বাসন নিয়ে। বৈঠকের পর বৈঠক পেরোলেও কয়লা খনির বরাত পাওয়া ডিভিসির কর্তারা দিতেই পারছিলেন না পুনর্বাসনের প্রস্তাব। তা নিয়ে লোবাবাসীরাই শুধু নয় খোদ বীরভূম জেলা প্রশাসনের কর্তারাও অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।

প্রস্তাবে দেখা গেছে, প্রথমত, যে সমস্ত মানুষকে উচ্ছেদ হতে হবে এই প্রকল্পের জন্য অথবা দিতে হবে জমি তাদের চাকরী দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বেমালুম ভুলে গিয়ে মাসে দু-চার হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হবে বলে ঘোষনা রাখেন ডিভিসি কর্তারা। যা কোনোভাবেই মানা সম্ভব নয় লোবাবাসীদের পক্ষে বলে ইতিমধ্যেই জানান মিলেছে।
 
দ্বিতীয়ত, জমির দর হিসাবে একর পিছু ১৪ লাখ টাকা দেওয়ার একটা প্রাথমিক প্রস্তাব রেখেছে ডিভিসি। ক্ষোভ সেখানেও। কারন প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকার জমির বাজার দরের থেকে অনেক কম। ফলে এই প্রস্তাব যে লোবাবাসীর পক্ষে মানা সম্ভব নয় তাও স্পষ্ট করে দিয়েছে কৃষি জমি রক্ষা কমিটির নেতারা।

তৃতীয়ত, ভিটে বাটি যাওয়া মানুষদের পুনর্বাসনের বাড়ি তৈরী করার ক্ষেত্রে পাঁচটি স্তরে ভাগ করে বাড়ি তৈরী করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিভিসি-র প্রতিনিধিরা। সেই সঙ্গে স্কুল, হাসপাতাল প্রভৃতি নির্মানেরও ম্যাপ এদিন প্রজেক্টরে দেখিয়েছেন তারা। এ ব্যাপারেও সম্মতি মেলেনি লোবা-র প্রতিনিধিদের তরফে। তাদের সাফ কথা, ম্যাপ দেখে গ্রামের মানুষ কিছুই বুঝবেন না। তাদের কাছে গিয়ে মডেল দেখাতে হবে। যদি তাতে গ্রামবাসী রাজী হয় তবে সেটা গ্রহন করা হবে।

এরপর আজ লোবা কৃষি জমি রক্ষা কমিটির ধিক্কার দিবসে লোবা জমি কড়া মনোভাব লক্ষ্য করা যায় গ্রামবাসীদের মধ্যে। লোবা কৃষি জমি রক্ষা কমিটির প্রতিনিধিদের যা প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে তাতে স্পষ্ট এই পুনর্বাসন প্যাকেজ কোনোভাবেই মানবেন না তারা।

লোবা কৃষি জমি রক্ষা কমিটির সম্পাদক জয়দীপ মজুমদার জানিয়েছেন, “শিল্পের জন্য হাজার হাজার মানুষ ভীটে-মাটি, জমি ছেড়ে নতুন করে উদ্বাস্তু হবেন। তাদের পুনর্বাসন হিসাবে দু-চার হাজার টাকা ভাতা মেনে নেওয়া কি করে। আসলে ডিভিসি লোক দেখানো কাজ করছে। জমির দর, বাড়ি তৈরীর বিভিন্ন স্তর যা বলা হয়েছে তার প্রেক্ষিতে আমরা বলেছি ঠান্ডা ঘের বৈঠকে বসে এই সমস্যা মিটবে না। ডিভিসি-কে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের সাথে কথা বলে পুনর্বাসন প্যাকেজ স্থির করতে হবে। আমরাও চাই শিল্প হোক, তবে আমাদের দাবিদাওয়া মেনে।”