পৌষ মেলার মাঠেই হবে মেলা! ৯ শর্তে প্রশাসনকে মাঠ দিতে রাজি বিশ্বভারতী

নিজস্ব প্রতিবেদন : জেলা প্রশাসনকে পৌষ মেলা করার জন্য বিশ্বভারতী (Visva Bharati) পূর্ব পল্লীর মাঠ দিতে প্রস্তুত। বিশ্বভারতী এবং শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট সময়ের অভাবে পূর্ব পল্লীর মাঠে পৌষ মেলার (Poush Mela 2023) আয়োজন করতে পারবেনা তা আগেই জানিয়ে দিয়েছিল। এরপর মানুষের আবেগ এবং রুজি রোজগারের কথা মাথায় রেখে বীরভূম জেলা প্রশাসন গত দুদিন আগে একটি বৈঠক করে। যেখানে তাদের তরফ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পূর্বপল্লীর মাঠে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় মেলা করার জন্য বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে তারা আবেদন জানাবে। যদি সেই আবেদনে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ সাড়া দেয় তাহলে ঠিক আছে, আর তা না হলে গত দু বছরের মতো বিকল্প পৌষ মেলার আয়োজন করা হবে ডাকবাংলো মাঠে।

বৈঠক অনুযায়ী গত ৮ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে পূর্বপল্লীর মাঠে মেলার আয়োজনের জন্য বিশ্বভারতীর কাছে আবেদন জানানো হয়। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে পৌষ মেলার জন্য পূর্বপল্লীর মাঠ বীরভূম জেলা প্রশাসনকে দিতে প্রস্তুত বলে জানানো হয়েছে। তবে পূর্বপল্লীর মাঠে মেলার আয়োজনের জন্য সম্মতি দিলেও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কয়েকটি শর্ত রাখা হয়েছে। যদিও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এগুলিকে শর্ত মনে না করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়াও আলোচনার মধ্য দিয়েও সিদ্ধান্তে আসতে পারা যেতে পারে বলে জানানো হয়েছে।

শর্ত ১) বিশ্বভারতী প্রাঙ্গণে মেলার আয়োজনের জন্য গ্রিন ট্রাইবুনাল যে শর্ত বেঁধে দিয়েছে তা মানা হবে কিনা তা নিশ্চিত করা।

শর্ত ২) বিশ্বভারতী এবং শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট যেহেতু মেলার আয়োজন করবে না, যেহেতু এই মেলার আয়োজনের সব দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের, তাই মেলাকে ঘিরে কোন আইনি জটিলতার সৃষ্টি হবে কিনা তা সম্পর্কে নিশ্চয়তা প্রদান করা।

শর্ত ৩) বিশ্বভারতীর সাংস্কৃতিক এবং নান্দনিক রুচি মেনেই এই মেলার আয়োজন করা হবে কিনা তা জানানো।

শর্ত ৪) গ্রিন ট্রাইবুনালের নির্দেশ মেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মেলা শেষ করে মেলার মাঠ পরিষ্কার করে বিশ্বভারতীকে পূর্বের মতো ফিরিয়ে দেবে কিনা, এই বিষয়টি নিশ্চিত করা।

শর্ত ৫) মেলার সমস্ত খরচ বোলপুর মহকুমা প্রশাসন খরচ করবে কিনা সেই বিষয়টি জানানো।

শর্ত ৬) মেলা প্রাঙ্গনে মেলা করার জন্য বিশ্বভারতীর যেটুকু অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন সেই অনুমতি ছাড়া বাকি সব অনুমতির দায়িত্ব প্রশাসন বহন করবে কিনা তা জানানো।

শর্ত ৭) মেলা চলাকালীন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অধ্যাপিকা, পড়ুয়া এবং শিক্ষা কর্মীদের নিরাপত্তা প্রদান ও পঠন-পাঠনের পরিবেশ বজায় রাখার দায়িত্ব প্রশাসন বহন করবে কিনা তা নিশ্চিত করা।

আরও পড়ুন 👉 কেষ্ট অতীত! শেষ হয়ে গেল অনুব্রত যুগ! কে চালাবে বীরভূম!

শর্ত ৮) ২০১৯ সালের মেলা শেষ হওয়ার পর বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল এবং সেই সকল ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শান্তিনিকেতন থানায় মামলা রুজু হয়েছিল। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বভারতীর অনেকের মনোবল ভেঙে পড়েছিল। এক্ষেত্রে সেই সকল মামলার নিষ্পত্তি করে প্রশাসন এবং বিশ্বভারতীর মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি করার মধ্য দিয়ে মেলার আয়োজন এবং বিশ্বভারতীর কর্মীদের মনোবল ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কোন সদর্থক পদক্ষেপ নিয়ে মেলার আয়োজন করা যায় কিনা।

শর্ত ৯) শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট পূর্বপল্লীর মাঠে মেলার আয়োজন করার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বভারতীর কৃতজ্ঞভাজন হয়ে ২০ হাজার টাকা প্রদান করে থাকে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের তরফ থেকে এই ধরনের কোন অর্থ প্রদান করা যেতে পারে কিনা সেই নিয়ে বিবেচনা করা।

বিশ্বভারতীর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এই সমস্ত বিষয়ে আশ্বাস পেলে কেবলমাত্র এই বছরের জন্য বিশ্বভারতী প্রাঙ্গণে মেলা আয়োজনের জন্য বোলপুর মহকুমা প্রশাসনকে মেলার মাঠ দিতে কোন আপত্তি নেই। তবে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে যে সকল শর্ত আরোপ করা হয়েছে সেই সকল শর্তের পরিপ্রেক্ষিতে মেলার আয়োজন সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন মহলে।