করোনাভাইরাসের জের, বাতিল শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসব

অমরনাথ দত্ত : চলতি বছর শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসব নিয়ে প্রথম থেকেই দেখা যায় টালবাহানা। গতবছরের বিশৃংখল পরিস্থিতির কারণে এবছর বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ প্রথম থেকে এই বসন্ত উৎসব দোলের দিন না করে তার প্রায় ২০ দিন আগে বিশ্বভারতীর পড়ুয়া ও শিক্ষকদের নিয়ে নিজেদের মধ্যেই করতে চেয়েছিল।

তবে তারা দোলের দিনে বসন্ত উৎসব করা নিয়ে জানিয়েছিল, যদি রাজ্য সরকার প্রশাসনিক ভাবে তাদের সাহায্য করে তাহলে দোলের দিনেই বসন্ত উৎসব হবে শান্তিনিকেতনে। আর তারপর দফায় দফায় আলোচনায় রাজ্য সরকার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় বিশ্বভারতীকে। ৮২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করা হয় আশ্রম মাঠ ছেড়ে পৌষ মেলার মাঠে। কিন্তু সেখানেও বাধ সাদলো করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাসের জেরে এবছর বাতিল হয়ে গেল পৌষ মেলার মাঠে শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসব।

শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসবে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়। এই সকল মানুষেরা জেলা, রাজ্য, দেশ ছাড়াও বিদেশ থেকেও আসেন। কিন্তু এবছর করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে আশঙ্কা করা হচ্ছে এই লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগমের ফলে ভাইরাস সংক্রমণের মতো ঘটনা ঘটতে পারে। যে কারণে ইউজিসির তরফ থেকে একটি নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে বিশ্বভারতীকে। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী শুক্রবার জরুরী ভিত্তিতে একটি EC মিটিংয়ের আয়োজন করা হয় বিশ্বভারতীতে। এই মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য থেকে অন্যান্য কর্তৃপক্ষরা, উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতির বিশ্বভারতীর প্রতিনিধি ডাক্তার সুশোভন ব্যানার্জি। মিটিং শেষে জানিয়ে দেওয়া হয় এ বছরের জন্য বাতিল করা হলো শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মাঠে বিশ্বভারতীর বসন্ত উৎসব অনুষ্ঠান।

অন্যদিকে বিশ্বভারতীতে EC মিটিং চলাকালীন বীরভূম জেলা সমাহর্তা মৌমিতা গোদারা বসু জানিয়ে দেন, “বিশ্বভারতীর বসন্ত উৎসব হবে, না হবে না তা সম্পূর্ণ বিশ্বভারতীর সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কেবলমাত্র আমাদের কাছে প্রশাসনিক সহযোগিতা চেয়েছিল, আর সেই সহযোগিতার বন্দোবস্ত আমরা করেছিলাম।”

বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে জানানো হয়, “সরকারের ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু গত পাঁচ তারিখে ইউজিসির তরফ থেকে আমাদের একটি নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে, যাতে বলা হয়েছে যেন কোন প্রকার বেশি লোকের সমাগম এখানে না করা হয়। সেই নির্দেশিকার কথা মাথায় রেখে চলতি বছরের হোলির দিনে যে বসন্ত উৎসব করার কথা ছিল তা আমরা স্থগিত রাখছি। তবে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কমলে পরে বসন্ত উৎসব করা যায় কিনা তা ভেবে দেখব।”

রাষ্ট্রপতির বিশ্বভারতীর প্রতিনিধি ডাক্তার সুশোভন ব্যানার্জি জানান, “প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম সকালের অনুষ্ঠানটা করে অনুষ্ঠান স্থগিত রাখবো। কিন্তু তাতেও লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়ে যায়। কিন্তু এর ফলে যদি কোন ভাইরাসের সংক্রমণ হয়ে যায় তাহলে এই চিঠি আসার পর ইউজিসি কিন্তু আমাদের ছাড়বে না। আর এই বসন্ত উৎসব স্থগিত হয়ে যাওয়ার কারণে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও রাজ্য সরকার দুজনেরই বিপুল আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।”

শুক্রবার EC মিটিংয়ে বিশ্বভারতীর বসন্ত উৎসব বাতিল হওয়ার ঘোষণায় ইতিমধ্যেই মাথায় হাত পড়েছে বোলপুর শান্তিনিকেতনের হোটেল ব্যবসায়ী থেকে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের। কারণ এই বসন্ত উৎসবের মরসুমে তারা বিপুল পরিমাণ মুনাফার মুখ দেখেন। অন্যদিকে আবার বসন্ত উৎসব বাতিল হয়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যেই বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন রাজ্য সরকার। কারণ তারা ইতিমধ্যেই ৮২ লক্ষ টাকা খরচের হিসাব তুলে ধরেছিল বসন্ত উৎসবকে ঘিরে। শুধু হিসাব তুলে ধরা নয়, পৌষ মেলার মাঠে মঞ্চ থেকে ব্যারিকেড ও অন্যান্য প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে এসে পৌঁছেছিল।