নিজস্ব প্রতিবেদন : ভারতের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক উৎসব প্রধানমন্ত্রী বাছাইয়ের লড়াই শুরু হয়েছে ২০১৯ সালের ১১ ই এপ্রিল। মোট ৭টি দফায় ভোটগ্রহণের প্রক্রিয়া শেষ হবে আগামী ১৯ শে মে। ২০১৯ এর সাধারণ নির্বাচনের গণনা ২৩ মে। সেদিন সকাল আটটা থেকে গণনা শুরু হবে।
আর মাত্র দিন কয়েকের অপেক্ষা আর তারপরই দেশের রাজনীতির সাথে সাথে বঙ্গ রাজনীতির গোটা অঙ্কের হিসাব পাওয়া যাবে। কার হবে জয়, কার হবে হার তা জানা যাবে আগামীকাল অর্থাৎ ২৩ শে মে। ভোটের ফল কী হবে তা জানতে আমরা আগ্রহী ঠিকই। কিন্তু কিভাবে ভোট গণনা হয় বা ভোটগণনার পদ্ধতি কী তা কি আমরা জানি? অধিকাংশের উত্তরই হয়তো না হবে। তাহলে আসুন একঝলকে দেখে নেওয়া যাক ভোটগণনার খুঁটিনাটি।
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, দেশের ৫৪৩ টি কেন্দ্রের ভোট গণনা হবে মোট পাঁচটি পদ্ধতিতে। প্রথমেই গণনা করা হবে পোস্টাল ব্যালটের। অ্যাসিস্টেন্ট রিটার্নিং অফিসারের নেতৃত্বে গণনা হবে পোস্টাল ব্যালটের। পশ্চিমবঙ্গের ৪২ টি কেন্দ্রের ভোট গণনা হবে ৫৮ দিন গণনা কেন্দ্রে।
তারপর গণনা হবে সার্ভিস ভোটারদের ভোট। তিনটি খামের ভিতর থাকবে পোস্টাল ব্যালট। প্রথমেই খোলা হবে একেবারেই প্রথমের খাম, তারপর দ্বিতীয় খাম, যেখানে থাকবে সার্ভিস ভোটের ডিক্লেয়ারেশন। তারপর তৃতীয় খামে থাকবে পোস্টাল ব্যালট। এই খামের ভেতর পোস্টাল ব্যালটের সঙ্গে থাকবে কিউআর কোড। এই কোডকে স্ক্যান করা হবে। যদি স্ক্যান মিলে যায় তবেই এই ভোট গণনা করা হবে।
এরপর গণনা হবে ইভিএম। গণনা কেন্দ্রে থাকবে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা। এরপরই ইভিএম কন্ট্রোল ইউনিট নিয়ে আসা হবে স্ট্রং রুম থেকে। প্রত্যেকটি গণনা কেন্দ্র যার ভিতর কাউন্টিং হল থাকবে সেখানে সাতটি বিধানসভায় প্রায় ১৪টি টেবিল ১৫ থেকে ১৬ রাউন্ড। এভাবেই কন্ট্রোল ইউনিটের গণনা করা হবে। দেখা যায় যদি কোনো কন্ট্রোল ইউনিট বিগড়ে যায় তাহলে সেই কন্ট্রোল ইউনিটের ভিভিপ্যাট গণনা করা হবে।

কন্ট্রোল ইউনিটের গণনা শেষেই শুরু হবে ভিভিপ্যাটের গণনা। লটারির মাধ্যমে প্রত্যেক বিধানসভা থেকে পাঁচটি করে ভিভিপ্যাট বেছে নেওয়া হবে। যাদের আনা হবে স্ট্রং রুম। তারপর সেগুলি একসাথে গণনা হবে।
কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রত্যেক বিধানসভার গণনা করতে সময় লাগতে পারে আনুমানিক ২ ঘন্টা।

প্রতিটি গণনা কেন্দ্রে থাকবে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা। স্ট্রং রুমে থাকবে প্যারা মিলিটারি ফোর্স। এক প্লাটুনের কিছু বেশি সংখ্যায় থাকবে এই বাহিনী। স্ট্রং রুমের লাগোয়া থাকবে কাউন্টিং হল। কাউন্টিং হলের ভেতর থাকবে সিএপিএফ। কাউন্টিং হলের বাইরে থাকবে রাজ্য পুলিশের সশস্ত্র বাহিনী। তার বাইরে থাকবে কেবলমাত্র সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা। এই জায়গা থেকে ১০০ মিটার দূরে থাকবে পেদেস্ট্রিয়ান জোন। যেখানে থাকবেন পুলিশ আধিকারিক ও ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের আধিকারিকরা। গণনাকেন্দ্র চত্বরে সমস্ত রকম গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে। কেবলমাত্র সাধারণ মানুষ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করতে পারবেন। বাইরে ১৪৪ ধারা থাকবে গণনার দিন সকাল থেকেই। দেশের সমস্ত গণনাকেন্দ্রে একই নিয়ম লাগু থাকবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যে কোন রকম বিশৃঙ্খলা এড়াতে কড়া নজর থাকবে কমিশনের।
প্রতিটি রাউন্ডের গণনা শেষ হলেই রিটার্নিং অফিসার সেই ফলাফল যোগ করে লিখে দিবেন একটি বোর্ডে। অন্যদিকে মাইকিং করেও বাইরে ঘোষণা করা হবে।
ঘোষণা শেষ হওয়ার পরই দ্বিতীয় রাউন্ডের জন্য স্ট্রং রুম থেকে নতুন কন্ট্রোল ইউনিট আনা হবে কাউন্টিং হলের ভিতর।

ভোটের কর্মীদের ভোটগণনার জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের বাছাই হয়। গণনার একসপ্তাহ আগে তাদের একটি গণনা কেন্দ্রের জন্য তাদের নির্বাচিত করা হয়। তারপর চলে তাদের প্রশিক্ষণ। কোন গণনা কেন্দ্রের জন্য একজন ভোট কর্মীকে সেখানে পাঠানো হবে তা তিনি গণনার ২৪ ঘন্টা আগে জানতে পারবেন।
ভোটগণনার দিন সকাল ৫ টায় ভোটকর্মীদের টেবিল দেওয়া হয়। প্রত্যেক গণনা টেবিলে থাকবে একজন করে সুপারভাইজার। এছাড়াও থাকবেন একজন সহকারী এবং একজন মাইক্রো অবজার্ভার।

প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের গণনার জন্য থাকবেন একজন করে পর্যবেক্ষক। তারা রিপোর্ট দিবেন নির্বাচন কমিশনে। প্রতি রাউন্ড গণনা শেষে, পর্যবেক্ষকরা ফল মূল্যায়নের জন্য যেকোনও ২ টি ভোটিং যন্ত্র বেছে নেন। প্রত্যেক রাউন্ডের পর ভোট গণনার কার্যপ্রণালী একাধিক বার পরীক্ষা করার পর কমিশনে জানান। এরপর তারা ভোট কেন্দ্রের মিডিয়া সেন্টারে সাধারনের জন্য ফলের প্রবণতা জানাতে থাকেন। গণনার শেষে সংখ্যাগুলি ৩ বার করে পরীক্ষা করেন পর্যবেক্ষকরা, এবং প্রত্যেক টেবিলের ভোটগণনার কর্মীকে যাচাই করার পর রিটার্নিং অফিসারকে ফল ঘোষণা করতে বলা হয়।
পর্যবেক্ষকরা ছাড়া গণনাকেন্দ্রের ভিতর অন্য কেউ মোবাইল ফোন নিয়ে ঢুকতে পারেন না। ভোটগণনা চলাকালীন কোনও ভোট কর্মী সেখান থেকে বেরোতে বা ঢুকতে পারবেন না।